বিএড ২০২২ ব্যাচের একীভূত শিক্ষা (২৪০২) এর নির্ধারিত কাজ ২

# এটি নির্ধারিত কাজ এর একটি নমুনা। কেমন হয়েছে দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, ধন্যবাদ।  # 

# শিখন ও শিখন যাচাই (EDBN-2401) এর নির্ধারিত কাজ-১

# শিখন ও শিখন যাচাই (EDBN 2401) এর নির্ধারিত কাজ-২

একীভূত শিক্ষা (EDBN-2402) নির্ধারিত কাজ-১

একীভূত শিক্ষা (EDBN-2402) নির্ধারিত কাজ- ২

প্রাথমিক শিক্ষা এর (EDBN-2451) নির্ধারিত কাজ ১

প্রাথমিক শিক্ষা এর (EDBN-2451) নির্ধারিত কাজ ২


কোর্সের নামঃ একীভূত শিক্ষা 

কোর্স কোডঃ EDBN-২৪০২

নির্ধারিত কাজ-২

“একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সরকারি ও বিদ্যালয় পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ব্যাখ্যাকরণ।" 


ভূমিকাঃ 

পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর মোট চার ভাগের তিন ভাগই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশুর বসবাস আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। শিক্ষার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। যে শিশুটি এই মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, সে সুস্থ আর স্বাভাবিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে গড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। একীভূত শিক্ষা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে সকল শিক্ষার্থীকে, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের, সাধারণ শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব ধরনের শিশুর সমভাবে শিক্ষালাভের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয। এই প্রক্রিয়ায় একই শ্রেণিকক্ষে একই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে সব ধরনের শিশুকে শিক্ষাদান করা হয়। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বজুড়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নযনের কৌশল হিসেবেও একীভূত শিক্ষা বহুল আলোচিত একটি পরিভাষা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।   সাম্প্রতিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও নীতিমালায় সবার জন্য মানসম্পন্ন একীভূত শিক্ষা বাস্তবাযনকে বিশেষ গুরুত্ব দেযা হযেছে। একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার লক্ষ্য "সবার জন্য শিক্ষা" বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রযাসের সাথে তাল মিলিযে বাংলাদেশেও সরকারি বেসরকারি প্রচেষ্টায একীভূত শিক্ষার কৌশলসমূহকে সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নে গুণগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।


★ একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ সমূহঃ


ইউনেস্কো কর্তৃক ২০০৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষার প্রসার শীর্ষক একটি সেমিনারে একীভূত শিক্ষাকে Old Message in a New Coat হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে (Save the Children, ২০০৩, p.২২)। কেননা একজন সংবেদনশীল শিক্ষক সর্বদাই জানেন যে সকল শিশুর শিখনরীতি বা শৈলি একইরকম নয। সব শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্বও বটে। গত কযেক বছরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্থানীয (তাদের বাড়ির নিকটবর্তী) বিদ্যালয়ে আনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হযেছে। ফলে প্রতিবন্ধী অনেক শিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর শিশু ও তাদের পরিবার সুফল পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো সরকারি ও বিদ্যালয় পর্যায়ে নানাভাবে কার্যকর করা যায়।

checked


★ একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে সরকারি পর্যাযে গৃহীত পদক্ষেপঃ 

একীভূত শিক্ষা (Inclusive Education) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো সকল শিশু, বিশেষ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি পর্যাযে গৃহীত কিছু প্রধান পদক্ষেপ নিম্নরূপ:


১. নীতিমালা প্রণয়ন:

• প্রাথমিক শিক্ষা নীতি ২০১০: এই নীতিমালার মাধ্যমে সকল শিশুর জন্য সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হযেছে। 

• জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০: এই নীতিমালার আওতায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা এবং সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


২. বিশেষ স্কুল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষ:

• সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রধানধারার স্কুলে অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষ চালু করেছে। 


• অনেক সরকারি স্কুলে হাটার ঢালু পথ (ramp) ও অন্যান্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে প্রতিবন্ধী শিশুরা সহজে শিক্ষালাভ করতে পারে।


৩. শিক্ষক প্রশিক্ষণ:

• একীভূত শিক্ষার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের একীভূত শিক্ষার ধারণা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠদান পদ্ধতি শেখানো হয়।


৪. সহাযক শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহ:

• বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সহাযক শিক্ষাসামগ্রী যেমন ব্রেইল বই, শ্রবণ যন্ত্র, এবং অনলাইন ও ডিজিটাল শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।


checked


৫. সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচারণা:

• একীভূত শিক্ষার প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করছে, যাতে সমাজের সকল অংশের মানুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। 


৬. আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা:

* ইউনিসেফ, UNESCO সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয় করে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। এই সংস্থাগুলো একীভূত শিক্ষার উন্নয়নে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সহাযতা প্রদান করছে।


৭. আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন:

• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে স্কুলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নিয়মাবলী প্রণয়ন করা হযেছে। 


এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর করার মাধ্যমে সরকার একীভূত শিক্ষার ধারাকে প্রাতিষ্ঠানিককর রূপ দিতে এবং সকল শিশুর জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।


★ একীভূত শিক্ষা বাস্তবাযনে বিদ্যালয় পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপঃ

একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যালয় পর্যায়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়স উচিত। এগুলো নিম্নরূপ: 


১. সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ:

• শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: বিশেষ প্রযোজন সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কীভাবে কাজ করতে হয়, সে বিষযে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।


• সচেতনতা বৃদ্ধি: বিদ্যালযের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং প্রশাসনিক কর্মীদের মধ্যে একীভূত শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

ছেচকেদ


২. অবকাঠামো উন্নয়ন:

• প্রবেশযোগ্য পরিবেশ: বিদ্যালযের ভবন, শ্রেণীকক্ষ এবং শৌচাগারকে বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশযোগ্য করা, যেমন র‍্যাম্প ও হুইলচেয়ার-সক্ষম স্থাপনা।

• শিক্ষাসামগ্রীতে বৈচিত্র্য: শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই, অডিও বই, এবং অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।


৩. পাঠ্যক্রম এবং মূল্যাযনের বৈচিত্র্য:

• নমনীয় পাঠ্যক্রম: বিভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রযোজন অনুযাযী পাঠ্যক্রমকে নমনীয করা, যাতে তারা তাদের নিজের গতিতে শিখতে পারে।

• বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি: পরীক্ষার সময় বাড়ানো, বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্নধর্মী মূল্যায়ন পদ্ধতির ব্যবস্থা করা।



৪. সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার:

• প্রযুক্তি-ভিত্তিক সহাযতা: বিশেষ প্রযোজন সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণ সহায়ক প্রযুক্তির (যেমন স্পিচ টু টেক্সট, হিযারিং এইড, ইলেকট্রনিক ডিভাইস) প্রযোগ। 


৫. সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ:

• সহপাঠী সহাযক ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। 

• পরামর্শ সেবা: বিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহাযতা প্রদান করা, যাতে বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে থাকে।


৬. পরিবার ও সম্প্রদাযের অংশগ্রহণ: 

• অভিভাবকদের সহযোগিতা: অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করা।

• সম্প্রদাযের ভূমিকা: স্থানীয সম্প্রদায ও সমাজের সাথে একীভূত শিক্ষার বিষযে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা এবং তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

এসব পদক্ষেপ বিদ্যালযগুলোতে একীভূত শিক্ষার সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। 

checked


উপসংহার:

একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে সরকারি ও বিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, যা শিক্ষাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করে চলেছে, যার মধ্যে পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি, বিদ্যালয়গুলোতে একীভূত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, পঠন-পাঠন পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে, এ উদ্যোগগুলোর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন অব্যাহত মনিটরিং, অর্থনৈতিক বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সমন্বয়। একীভূত শিক্ষার টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঠিক নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবেই একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যা সকলের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।

























Comments

Popular posts from this blog

বিএড ২০২২ ব্যাচের একীভূত শিক্ষা (EDBN-2402) নির্ধারিত কাজ ১

বিএড ২০২২ ব্যাচের শিখন ও শিখন যাচাই (EDBN-2401) নির্ধারিত কাজ ১

বিএড ২০২২ ব্যাচের প্রাথমিক শিক্ষা এর (EDBN-2451) নির্ধারিত কাজ ২